বালি কি?

বালি একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্মাণসামগ্রী। এগুলো মূলত শিলা কণাবিশেষ। কোয়ার্টজ এর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণাই বালি হিসেবে পরিচিত। আবহাওয়ার ক্রিয়ার বালির আকার-আকৃতিতে বৈষম্য পরিলক্ষিত হয়। বিভিন্ন গ্রেড ও সাইজের বালি পাওয়া যায়। বালি কোয়ার্টজজাত, চুনাপাথরজাত ও কাদাজাত পাথর হতে পাওয়া যেতে পারে।

বালির কণাগুলো কোনাদার, গোলাকৃতিবিশিষ্ট বা সূক্ষ্মগ্রবিশিষ্ট হতে পারে। ASTM অনুযায়ী 4.75 মিলিমিটার হতে 0.075 মিলিমিটার আকার খনিজ অ্যাগ্রিগেটই বালি।

উৎস অনুসারে বালিকে তিন শ্রেণিতে ভাগ করা হয়

১.গর্তের বালি
২.নদীর বালি
৩.সমুদ্রের বালি

১.গর্তের বালি: এ জাতীয় বালির বর্ণ বাদামি বা হলুদাভ। এগুলো সূক্ষ্ণগ্র, কোনাদারবিশিষ্ট এবং লবণমুক্ত।এগুলোতে সামান্য কাদা ও অন্যান্য অপদ্রব্য থাকতে পারে। এ কারণে এ জাতীয় বালি ব্যবহারের পূর্বে চালুনিতে চেলে এবং ধৌত করে ব্যবহার হয়। এ বালি ফাইন অ্যাগ্রিগেট হিসেবে মসলা ও কংক্রিটে ব্যবহার করা যায়। এ বালি মসলার জন্য বিশেষ উপযোগী।

২.নদীর বালি: নদীর বালির বর্ণ অনেকটা সাদা এবং আকার অপেক্ষাকৃত ছোট এবং গোলাকৃতিবিশিষ্ট। এদের পৃষ্ঠ মসৃণ। এগুলোর সাথে সামান্য পরিমাণ কাদাজাত অপদ্রব্য ও গ্রোভেল মিশ্রিত অবস্থায় পাওয়া যায়। তাই এগুলো উত্তমরূপে ধৌত করে এবং চালুনিতে চেলে নির্মাণকাজে ব্যবহার করা শ্রেয়।

গর্তের বালি অপেক্ষা নদীর বালি সূক্ষ্ণ বিধায় আস্তরের কাজের জন্য এগুলো বিশেষ উপযোগী। তবে অপেক্ষাকৃত বড় আকারের নদীর বালি মসলা ও কংক্রিটের কাজেও ব্যবহার করা হয়।

৩.সমুদ্রের বালি: সমুদ্রের বালি সাদা বর্ণের এবং বেশ মসৃণ এবং গোলাকৃতির। এগুলোতে জীবাশ্ম ও লবণ মিশ্রিত অবস্থায় থাকে। এগুলো নির্মাণে ব্যবহার করলে বায়ুমন্ডল হতে পানি শোষণ করে নেয় এবং নির্মাণ লোনাক্রান্ত হয়। এ বালি নির্মাণে ব্যবহার না করাই শ্রেয়।

এ ছাড়া বালিকণার আকার অনুযায়ী বালির শ্রেণিবিভাগ করা হয়ে থাকে।
বালিকণার আকার অনুযায়ী বালিকে তিন শ্রেণিতে ভাগ করা যায়, যথা-

১.মিহি বালি
২.মধ্যম বালি
৩.স্থুল বা মোটা বালি

ভাল বালির বৈশিষ্ট্য ও ধর্ম:-

ভাল বালি সূক্ষ্মগ্রবিশিষ্ট কোনাদার এবং বিশুদ্ধ সিলিকায় গঠিত। এগুলো কাদা, পলি, জীবাশ্ম, শেল, লবণ ইত্যাদি অপদ্রব্যমুক্ত। এগুলো শক্তিধর, টেকসই স্থায়িত্বশীল এবং আকারগত পর্যায় ক্রমিকভাবে সুবিন্যস্ত। সচরাচর ব্যবহার ক্ষেত্রে এগুলোতে ৩% হতে ৪% কাদা ও পলি থাকতে পারে। তবে নির্মাণে ব্যবহারের পূর্বে এগুলো ধৌত করে নেয়া উচিত।

বালি পরীক্ষা

জৈব পদার্থের উপস্থিতি নির্ণয়: একটি কাচের বোতলে নমুনা বালির সাথে ৩% সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড দ্রবণ মিশিয়ে বোতলটির মুখ বন্ধ অবস্থায় উত্তমরূপে ঝাঁকানোর পর ২৪ ঘন্টা রেখে দিলে যদি বাদামি বর্ণ ধারণ করে তবে বালিতে জৈব পদার্থের উপস্থিতি বুঝা যাবে। বর্ণের গাঢ়ত্ব বিচার করে জৈব পদার্থের মাত্রা নির্ধারণ করা যায়।

লবণের উপস্থিতি নির্ণয়: নমুনা বালি একটি পরিষ্কার কাচের গ্লাসে নিয়ে এতে পর্যাপ্ত পানি সংযোগ করে কয়েক মিনিট চামচ দিয়ে নাড়াচাড়া করে কিছু সময় স্থির অবস্থায় রেখে দেয়ার পর পরিষ্কার পানি জিহ্বার স্পর্শে আনলে যদি লবণ অনুভূত হয়, তবে বালিতে লবণের উপস্থিতি বুঝা যাবে।

বাংলাদেশে বালির প্রাপ্তিস্থান 

বাংলাদেশের সর্বত্রই প্রচুর পরিমাণে বালি পাওয়া যায়। সিলেট, ময়মনসিংহ, ঢাকা, দিনাজপুর, কুষ্টিয়া, চট্টগ্রাম প্রভৃতি জেলায় (সুনামগঞ্জ, দুর্গাপুর, সাভার, ডোমার, চরতারাপুর, কক্সবাজার) প্রচুর পরিমাণে উৎকৃষ্ট মানের নদীর বালি পাওয়া যায়। দেশের উত্তরাঞ্চলীয় জেলাগুলোতে বালি পাওয়া যায়, তবে এ অঞ্চলের বালি উৎকৃষ্ট মানের হয়।

বালির আয়তন স্ফীতি কী বা কেন হয় 

বালিতে একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় জলীয়কণা বিদ্যমান থাকলে বালি তার প্রকৃত আয়তন অপেক্ষা অধিক আয়তন প্রদর্শন করে। এটাকে বালির আয়তন স্ফীতি বলা হয়। বালিতে ৫% হতে ৮% বালির ওজনের জলীয়কণার উপস্থিতি এগুলোর আয়তন ২৫% হতে ৪০% এর মতো বাড়িয়ে দেয়। সর্বোচ্চ আয়তন স্ফীতির পর বালিতে আরও পানি দিয়ে বালি প্রকৃত আয়তন ফিরে আসে।

শুষ্ক বালিতে কম পরিমাণে পানি দিলে বালিকণার পৃষ্ঠে পানির প্রলেপন এবং পানির প্রলেপন ও বালিকণার পৃষ্ঠের মাঝে বাতাস আটকিয়ে আয়তন স্ফীতি ঘটে থাকে। বালিতে অধিক পরিমাণে পানি দিলে বালি নিমজ্জিত হওয়ার দরুন বালির ফাঁকে আটকানো বাতাস বুদবুদ আকারে বের হয়ে আসে এবং বালি প্রকৃত আয়তনে ফিরে যায়।

শুষ্ক মিহি বালিতে ১০% পানি দিলে প্রায় ৪০% আয়তন স্ফীতি হতে পারে। বালির আয়তন স্ফীতি মোটা বালির তুলনায় মধ্যম মানের বালিতে অধিক এবং মিহি বালিতে সর্বাধিক ঘটে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here