সিমেন্ট কি?

সিমেন্ট একটি উন্নতমানের জোড়ক পদার্থ। প্রকৌশল নির্মাণে জোড়ক পদার্থ হিসেবে এটা সর্বাধিক ব্যবহৃত।
ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম যৌগ সম্বলিত চুনজাত সামগ্রী পুড়িয়ে মিহি পাউডারে পরিণত করে সিমেন্ট তৈরি করা হয়। এর সাথে উদক চুনের সাদৃশ্য আছে। তবে এটা উদক চুন অপেক্ষা অধিক উদক গুণসম্পন্ন।

বর্তমান সময়ে নির্মাণ কাজে সিমেন্টের গুরুত্ব

বর্তমান যুগে কাঠামো নির্মাণের এ উন্নয়নের পিছনে যে জোড়ক পদার্থটির ভূমিকা সর্বাধিক, তার নাম সিমেন্ট।
বিভিন্ন কাজের উপযোগী করে বিভিন্ন মান ও ব্র্যান্ডের সিমেন্ট তৈরি করা সম্ভব হয়েছে বিধায় প্রায় সকল কাঠামো নির্মাণেই সিমেন্ট ব্যবহৃত হয়। সিমেন্ট মিহি পাউডার বিশেষ।

এগুলো সহজে পানির উপস্থিতিতে রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে জমাটবদ্ধ হয়ে নির্মাণের এককসমূহকে সংযুক্ত করে বিধায় এগুলো শক্তিশালী কাঠামো নির্মাণে সহায়ক। এগুলো পানির নিচের কাজে যেমন বাঁধ, পোতাশ্রয়, জেটি ইত্যাদি, গগনচুম্বী অট্টালিকা নির্মাণে, ঝুলন্ত কাঠামো ইত্যাদি নির্মাণে সফলভাবে ব্যবহার করা যায়।

এগুলোর জোরালো ও স্থায়ী বন্ধন ক্ষমতা, দীর্ঘ আয়ুষ্কাল ও যে কোন আবহাওয়ায় টিকে থাকার গুণ থাকায় জোড়ক পদার্থ হিসেবে এগুলোর ব্যবহার ব্যাপক। এ ছাড়া এগুলো যে কোন আকার-আকৃতির কাঠামো নির্মাণে ব্যবহার করা যায়।

পরিশেষে বলা যায় যে, এ জোড়ক পদার্থের উপযোগিতা এত বেশি এবং ব্যবহার এত ব্যাপক যে, এর আবিষ্কার না হলে মানব সভ্যতার বর্তমান পূর্ণপ্রাপ্তি অসম্পূর্ণ থেকে যেত।

সিমেন্টকে প্রধানত দুই শ্রেণিতে ভাগ করা হয়

কংক্রিটের -concrete১.প্রাকৃতিক সিমেন্ট
২.কৃত্রিম সিমেন্ট

১.প্রাকৃতিক সিমেন্ট: ২৫% হতে ৪০% কর্দমযুক্ত এবং অবশিষ্টাংশ কার্বোনেট অব লাইম বা কখনও তৎসংগে কার্বোনেট অব ম্যাগনেশিয়াযুক্ত প্রাকৃতিক চুনাপাথর পুড়িয়ে এবং মিহি পাউডারে চূর্ণ করে এ ধরণের সিমেন্ট তৈরি করা হয়। এর বর্ণ বাদামি এবং পানির সাথে মিশ্রণে এ সিমেন্ট দ্রুত জমাটবদ্ধ হয়। তবে এ সিমেন্ট কৃত্রিম সিমেন্টের ন্যায় অধিক শক্তিসম্পন্ন নয়।

ইংল্যান্ডে উৎকৃষ্ট মানের প্রাকৃতিক সিমেন্টকে রোমান সিমেন্ট বলা হয়। রোমিওগণ প্রথম চুনাপাথর পোড়ানো পাউডার নির্মাণকাজে জোড়ক পদার্থ হিসেবে ব্যবহার করেন। তবে এ সিমেন্ট বাংলাদেশে ব্যবহার হয় না। ইংল্যান্ডে জোসেফ পার্কার ১৮২৪ সালে কাদামিশ্রিত চুনাপাথর পুড়িয়ে প্রথম প্রাকৃতিক সিমেন্ট তৈরি করেন।

২.কৃত্রিম সিমেন্ট: ১৮২৪ সালে লিডসের জনৈক রাজমিস্ত্রি জোসেফ আসপদীন প্রথম কৃত্রিম সিমেন্ট তৈরি করেন। বিশুদ্ধ চুনাপাথরের সাথে সঠিক অনুপাতে মৃত্তিকা মিশ্রিত করত মিশ্রণকে কাঁচিক হবার প্রারম্ভিক তাপমাত্রায় পুড়িয়ে এবং উদ্ভূ ক্লিংকারকে মিহি পাউডারে চূর্ণ করে এ জাতীয় সিমেন্ট তৈরি করা হয়।

নির্মাণকাজের চাহিদা, পরিবেশ, অবস্থান, ধরন দিক বিবেচনায় পোর্টল্যান্ড সিমেন্ট তৈরি করা হয়। কৃত্রিম সিমেন্টের মধ্যে পোর্টল্যান্ড সিমেন্ট সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং বহুল ব্যবহৃত।

পোর্টল্যান্ড সিমেন্টগুলো হল 

(ক)সাধারণ পোর্টল্যান্ড সিমেন্ট
(খ)র‌্যাপিড হার্ডেনিং পোর্টল্যান্ড
(গ)পোর্টল্যান্ড ব্লাস্ট ফারনেস স্লাজ সিমেন্ট
(ঘ)সালফেট রেজিস্টিং সিমেন্ট
(ঙ)হোয়াইট পোর্টল্যান্ড সিমেন্ট
(চ)কালার্ড পোর্টল্যান্ড সিমেন্ট
(ছ)হাই অ্যালুমিলা সিমেন্ট
(জ)অয়েল ওয়েল সিমেন্ট

বিশেষ ধরণের সিমেন্ট ও এর ব্যবহার 

(১)র‌্যাপিড হার্ডেনিং পোর্টল্যান্ড: র‌্যাপিড হার্ডেনিং সিমেন্ট দ্রুত শক্ত হয় এবং ৪ দিনের সাধারণ পোর্টল্যান্ড সিমেন্টের ২৪ দিনের সমপরিমাণ শক্তি অর্জন করে। তাই একে আরলি স্ট্রেংথ পোর্টল্যান্ড সিমেন্ট বলা হয়। দ্রুত দৃঢ়তার জন্য এই সিমেন্টে (ক) সূক্ষ্ণতা বাড়িয়ে ‘স্পেসিফিক সারফেস’ বাড়ানো হয় (প্রতি গ্রামে ৩২৫০ বর্গসেমি এর কম নয়), (খ) চুনের মাত্রা বাড়ানো হয় এবং (গ) অধিক তাপমাত্রায় পোড়ানো হয়।

যে সকল ক্ষেত্রে অল্প সময়ে শাটারিং খুলে ফেলার দরকার হয় এবং দ্রুত কাজ সমাপ্ত করতে হয়, সে সকল ক্ষেত্রে এ সিমেন্ট ব্যবহার করা হয়। সাধারণত সিমেন্ট কংক্রিটের রাস্তা, সিউয়েজ লাইনের মেরামত ইত্যাদি কাজে এ সিমেন্ট ব্যবহার করা হয়। তা ছাড়া এগুলো শীতল আবহাওয়ায় কংক্রিটের কাজেও ব্যবহার করা যায় কেননা দ্রুত শক্ত হওয়ার সময় দ্রুত তাপ উৎপন্ন হয়, তাই শীতল আবহাওয়ায় বিঘ্ন ঘটায় না।

২.কুইক সেটিং পোর্টল্যান্ড সিমেন্ট: র‌্যাপিড হার্ডেনিং পোর্টল্যান্ড সিমেন্ট গ্রাইন্ডিং কালে এর সাথে ক্যালসিয়াম ক্লোরাইড মিশিয়ে কুইক সেটিং পোর্টল্যান্ড সিমেন্ড তৈরি করা হয়। এ সিমেন্টের প্রাথমিক জমাটবদ্ধতার সময় ৫ মিনিট এবং ৩০ মিনিটে চূড়ান্ত জমাটবদ্ধতা শেষ হয়। স্রোতস্বিনী বা পানির নিচের কাজে এ সিমেন্ট বিশেষভাবে ব্যবহার করা হয়।

৩.লো-হিট পোর্টল্যান্ড সিমেন্ট: এ সিমেন্ট জমাটবদ্ধতা ও কাঠিন্য অর্জনে সাধারণ সিমেন্ট অপেক্ষা কম তাপ বিমুক্ত করে এবং শক্তি অর্জনের হার অপেক্ষাকৃত মন্থর। এগুলো বৃহৎ বাঁধ, সেতুর অ্যাবটমেন্ট, পায়ার নির্মাণের কংক্রিট তৈরির ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়।

সিমেন্ট.Cement

৪.সালফেট রেজিস্টিং পোর্টল্যান্ড সিমেন্ট: পানিতে বা মাটিতে বিদ্যমান ক্ষতিকারক লবণ সোডিয়াম সালফেট, ম্যাগনেশিয়াম সালফেট মসলা ও কংক্রিটের উপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। নির্মাণের স্থায়িত্বের জন্য তাই সালফেট রেজিস্টিং সিমেন্ট ব্যবহার করা হয়, যেহেতু এগুলো তৈরিতে ট্রাই ক্যালসিয়াম অ্যালুমিনেট এর হার কমিয়ে দেয়া হয়, তাই শক্ত হওয়ার হার কিছু মন্থর হয়।

এগুলোকে সাধারণ পোর্টল্যান্ড সিমেন্টের চেয়ে সূক্ষ্ণ পাউডারে পরিণত করে শক্ত হওয়ার পর স্বাভাবিক রাখা হয়। তা ছাড়া এগুলোতে ডাই-ক্যালসিয়াম সিলিকেট এর পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়া হয়, তাই কিউরিং এর জন্য অধিক সময় দরকার হয়। সাধারণত সাগর জলে ও নদী মোহনায় সেতু, বাঁধ নির্মাণে সালফেট রেজিস্টিং সিমেন্ট ব্যবহার করা হয়।

৫.এয়ার এনট্রেইনিং পোর্টল্যান্ড সিমেন্ট: সাধারণ পোর্টল্যান্ড সিমেন্টের ক্লিংকারের সাতে ০.০১% হতে ০.০৫% জৈব ফোমিং সামগ্রী মিশিয়ে সূক্ষ্ণ পাউডারে পরিণত করে এ সিমেন্ট তৈরি করা হয়। ফলত কংক্রিট তৈরিকালে কংক্রিটে অসংখ্য অতি সূক্ষ্ণ বুদবুদ সৃষ্টি হয়। এতে কংক্রিটের ওজন ১০% হতে ১৫% কমে যায়, তুষার ক্রিয়ার প্রভাব কমে যায় এবং কংক্রিট সড়কের পেভমেন্টে সূক্ষ্ণ ফাটল দেখা দেয় না।

নির্মাণে তুষার ক্রিয়ারোধের জন্য এ সিমেন্ট ব্যবহার করা হয়। সাধারণত শীতপ্রধান এলাকায় কংক্রিট সড়ক ও ইমারত নির্মাণ, শীতল কক্ষের দেয়াল নির্মাণ ক্ষেত্রে এ সিমেন্ট ব্যবহার করা হয়।

৬.পোর্টল্যান্ড ব্লাস্ট ফারনেস স্লাগ সিমেন্ট: বাত্যাচুল্লিতে প্রাপ্ত ধাতুমল সাধারণ সিমেন্টের সাথে নির্দিষ্ট অনুপাতে মিশিয়ে পাউডারে পরিণত করে এ সিমেন্ট পাওয়া যায়। তবে ধাতুমল সালফাইডমুক্ত হতে হবে। এ সিমেন্ট সালফেটরোধী। কর্দম বা জলাভুমিতে সড়ক নির্মাণে, সমুদ্রজলে নির্মাণের জন্য এ সিমেন্ট ব্যবহার করা হয়।

এগুলো হাইড্রেশন কালে অপেক্ষাকৃত কম তাপ উৎপন্ন করে বিধায় এগুলো ‘লো হিট সিমেন্ট’ হিসেবে ব্যবহার করা যায় এবং বাঁধ, পায়ার,পুরু দেয়াল নির্মাণে ব্যবহার করা যায়।

৭.পাজোলান সিমেন্ট: পাজোলান সামগ্রী ক্লিংকারের সাথে নির্দিষ্ট অনুপাতে মিশিয়ে পাউডারে পরিণত করে অথবা সিমেন্টের সাথে পাজোলান সামগ্রীর পাউডার মিশিয়ে এ সিমেন্ট তৈরি করা হয়। এগুলো ধীর গতিতে শক্তি অর্জন করে। সাধারণত ইমারতের দেওয়াল, মেঝে নির্মাণে এ সিমেন্ট ব্যবহার করা হয়। এগুলো হাইড্রেশন কালে অপেক্ষাকৃত কম তাপ উৎপন্ন করে বিধায় এগুলো ‘লো হিট সিমেন্ট’ হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

৮.সাদা পোর্টল্যান্ড সিমেন্ট: আয়রন অক্সাইডের উপস্থিতির জন্য পোর্টল্যান্ড সিমেন্টের বর্ণ গ্রে বর্ণের হয়ে থাকে। সাদা সিমেন্টের জন্য কাঁচামাল নির্বাচনে বেশ সতর্ক থাকতে হয় যেন কাঁচামালে আয়রন অক্সাইড খুবই নগণ্য (১% এর কম) পরিমাণে থাকে। তাই সাধারণত চুনাপাথর বা লাইমের পরিবর্তে সাদা চক এবং কাদার পরিবর্তে জ্বালানি তেল বা গ্যাস ব্যবহার করা হয়।

তা ছাড়া আয়রন অক্সাইডের অনুপস্থিতিতে বিগালক হিসেবে সোডিয়াম অ্যালুমিনিয়াম ফ্লোরাইড ব্যবহার করা যায়। সৌন্দর্যবন্ধক মেঝে, ব্রিজ, রেইল, ট্রাফিক কার্ব, বিমানবন্দরে বিভিন্ন অঞ্চল চিহ্নিতকরণ কাজে সাদা সিমেন্ট ব্যবহৃত হয়। তা ছাড়া মার্বেল ও সাদা টালি তৈরিতে সাদা সিমেন্ট ব্যবহৃত হয়। সাদা সিমেন্টের বাণিজ্যিক নাম স্নোক্রিট।

৯.রঙিন পোর্টল্যান্ড সিমেন্ট: সাদা পোর্টল্যান্ড সিমেন্টের ক্লিংকারকে পাউডার আকারে গ্রাইন্ডিং করা কালে রঞ্চক মিশিয়ে রঙিন পোর্টল্যান্ড সিমেন্ট তৈরি করা হয়। রঞ্চকের পরিমাণ ১০% এর অধিক হওয়া বাঞ্ছনীয় নয়। তবে রঞ্জক অবশ্যই দ্রবণীয় লবণমুক্ত হতে হবে। সাধারণত পাউডার আকারে বিভিন্ন ধাতুর অক্সাইড রঞ্জক হিসেবে নির্দিষ্ট বর্ণের জন্য সাধারণ পোর্টল্যান্ড সিমেন্ট বা সাদা সিমেন্টের সাথে মিশিয়ে নির্দিষ্ট বর্ণের রঙিন সিমেন্ট তৈরি করা হয়।

যেমন লোহার বাদামি অক্সাইড বাদামি বর্ণের জন্য, কোবাল্ট অক্সাইড নীল বর্ণের জন্য ব্যবহৃত হয়। রঙিন সিমেন্ট সৌন্দর্যবর্ধক কাজে, সুইমিং পুল, ঝরনা, গোসলখানা, টেনিস কোর্ট, টালি ও কংক্রিটের বিভিন্ন ধরনের অলংকারমূলক নির্মাণকাজে ব্যবহৃত হয়। রঙিন পোর্টল্যান্ড সিমেন্টের বাণিজ্যিক নাম কালারক্রিট।

১০.অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল সিমেন্ট: পোর্টল্যান্ড সিমেন্টের সাথে জীবাণুনাশক সামগ্রীর পাউডার মিশিয়ে এ সিমেন্ট তৈরি করা হয়। কসাইখানার মেঝে, খাদ্য কারখানার মেঝে, সুইমিং পুল, গোসরখানার মেঝে নির্মাণে এ সিমেন্ট ব্যবহৃত হয়। সিমেন্ট পানির উপস্থিতিতে একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর জমাটবদ্ধ হওয়া আরম্ভ করে, তাই সিমেন্টের মসলা বা কংক্রিট জমাটবদ্ধ হওয়া আরম্ভর পূর্বে কাজে লাগাতে হয়।

সিমেন্ট তৈরির কাঁচামাল হল

সিমেন্ট

সিমেন্ট তৈরিকরণে প্রধানত দুই ধরণের কাঁচামাল ব্যবহার করা হয়:-

(ক)চুনজাতীয় দ্রব্য: ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেশিয়ামের যৌগ যেমন- চুনাপাথর, চক, মার্ল ইত্যাদি এ জাতীয় দ্রব্যের অন্তর্ভুক্ত।

(খ)কাদাজাতীয় দ্রব্য: প্রধানত সিলিকা, অ্যালুমিনা, আয়রন যেমন- কাদা, স্লেট, শেল।

সিমেন্ট তৈরির উপাদানকে প্রধাণত দুই ভাগে ভাগ করা হয়:-

১.খনিজ উপাদান।
২.অম্ল ও ক্ষারকীয় উপাদান (রাসায়নিক উপাদান)।

সিমেন্ট তৈরির প্রস্তুতকরণ

সাধারণত সিমেন্ট দুইভাবে প্রস্তুত করা হয়:-
১.সিক্ত পদ্ধতি
২.শুষ্ক পদ্ধতি

১.সিক্ত পদ্ধতি:-

এ পদ্ধতিতে তিন ধাপে সিমেন্ট প্রস্তুত করা হয়,
(ক)কাঁচামালসমূহ আনুপাতিক হারে মিশিয়ে স্লারি তৈরিকরণ
(খ)স্লারিকে পুড়িয়ে পিণ্ডে পরিণতকরণ
(গ)পিণ্ডের সাথে জিপসাম মিশিয়ে চূর্ণ করে মিহি পাউডারে পরিণতকরণ

(ক)কাঁচামালসমূহ আনুপাতিক হারে মিশিয়ে স্লারি তৈরিকরণ: এই পর্যায়ে কাঁচামালসমূহ (চুনাপাথর চক, কংকর, মার্ল ইত্যাদি চুনজাতীয় দ্রব্য; সিলিকা, অ্যালুমিনা, ম্যাগনেশিয়া, আয়রন, সংমিশ্রিত কাদাজাতীয় দ্রব্য) একত্রে মিশ্রত করে নেয়া হয়। সচরাচর চুনজাতীয় দ্রব্য ২ ভাগের (অর্থাৎ ৬০%-৬৫%) সাথে ১ ভাগ ৩৫%-৪০% কাদাজাতীয় দ্রব্য একত্রিত করা হয়। পাথর সম্পর্কে জানুন…

এ মিশ্রণকে চূর্ণক যন্ত্রে চূর্ণ করা হয়। এ সকল চূর্ণকৃত কাঁচামাল ওয়ামশিলে প্রয়োজনীয় পরিমাণ পানি সহযোগে মিহি করে পেষণ করা হয়। এ সময় পানির পরিমাণ প্রায় ৪৫% হতে ৫০%। ওয়াশমিলে পেয়ণকৃত মিশ্রণের ৮০% হতে ৯০% ভাগ ২০০ নং চালনি দিয়ে অতিক্রমণ করে। এ মিশ্রণকে স্লারি বলা হয়।

এ স্লারির তারল্য এমন যে পাম্পের সাহায্যে পাইপের মাধ্যমে স্থানান্তর করা যায়। ওয়াশমিলে পেষণকৃত সমসত্ত্ব মিশ্রণ স্লারি পাম্পের সাহায্যে সাইলো তে নেয়া হয়। এখানে স্লারির উপাদানসমূহের আনুপাতিক হার পরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় সংশোধন করা হয়।

(খ)স্লারিকে পুড়িয়ে পিণ্ডে পরিণতকরণ: এই পর্যায়ে সংশোধিত স্লারি পাম্প করে ঘুমন্ত চুল্লির উপরের প্রান্তীয় মুখে সরবরাহ করা হয়। সাধারণত ঘুরন্ত চুল্লির দৈর্ঘ্য ৬০ মিটার – ১২০ মিটার, ব্যাস ২.৫ মিটার হয়ে থাকে। এটা সিলিন্ডার আকৃতির এবং এর ইস্পাতের খোলকের অভ্যন্তরে তাপসহিষ্ণু ইটের লাইনিং করা থাকে। এটা ২০:১ ঢালে রোলার রিয়ারিং এর উপর স্থাপিত।

এটা নিজ অক্ষের উপর প্রতি মিনিটে ১ হতে ৩ বার ঘুরে। এটা তিনটি বলয়ে বিভক্ত তবে চুল্লিটির নিম্নপ্রান্তে নির্গমন পথে সংলগ্ন অতিতপ্ত অঞ্চলকে চতুর্থ বলয় অতিতপ্ত বলয় হিসেবে বিবেচনা করা যায়। এটাকে জ্বালানি হিসেবে কয়লা, তৈল বা গ্যাস ব্যবহার করা হয়। কয়লা ব্যবহার করলে গুঁড়া করে দিতে হয়। বাতাসের প্রবাহে কয়লা চুল্লির নিম্নপ্রান্তের প্রজ্বলিত অংশে দেখা হয়।

চুল্লিটির উপরে প্রান্তের প্রথম কয়েক মিটারে বিশেষ ধরণের শিকল ঝুলন্ত অবস্থায় থাকে। উপরের প্রান্তে দিয়ে সরবরাহকৃত স্লারি স্প্রে আকারে ঝুলন্ত তপ্ত শিকলের গায়ে পতিত হলে শুষ্ক হয়ে চুল্লির তলদেশে পড়ে। চুল্লির এ অঞ্চলই শুষ্ককারী বলয়। এ বলয়ে তাপমাত্রা ৪০০ডিগ্রী হতে ৬০০ডিগ্রী ফাঃ। এ অঞ্চলের পরই ভস্মীকরণ বলয়।

ঢালের কারণে শুষ্ক স্লারি ক্রমশ গড়িয়ে ভস্মীকরণ বলয়ে প্রবেশ করে এবং ভস্মীকরণের ফলে কার্বন ডাই-অক্সাইড মুক্ত হয়। এ বলয়ে তাপমাত্রা ১২০০ ডিগ্রী হতে ১৬০০ ডিগ্রী ফাঃ। ভস্মীকরণ অঞ্চল অতিক্রমকালেই ভস্মীকরণ সমাপ্ত হয় এবং উপাদানসমূহ পিণ্ডাকৃতি দানকারী বলয়ে প্রবেশ করে।

এখানে উচ্চতাপে ১৬০০ ডিগ্রী হতে ৩০০০ ডিগ্রী ফাঃ উপাদানগুলো রাসায়নিক বিক্রিয়া করে সিলিকেট, অ্যালুমিনেট ও ফেরাইটের যৌগ গঠন করে এবং ৬০ মিলিমিটার হতে ১২০ মিলিমিটার ব্যাসের মটর কলাই আকৃতির ছোট ছোট কাচ-সদৃশ পিণ্ডে পরিণত হয়।

এবং চুল্লির নিম্নপ্রান্তের অতিতপ্ত বলয় হয়ে যার তাপমাত্রা ৩০০০ ডিগ্রী ফাঃ এর বেশি নির্গমন পথে বের হয়ে শীতলীকরণ সিলিণ্ডারে প্রবেশ করে । শীতলকরণ সিলিণ্ডারের উভয় প্রাপ্ত খোলা বিধায় অবাধ বায়ু চলাচলের ফলে পিণ্ডগুলো শীতল হয়।

(গ)পিণ্ডের সাথে জিপসাম মিশিয়ে চূর্ণ করে মিহি পাউডারে পরিণতকরণ: তৃতীয় পর্যায়ে শীতল করা পিণ্ডগুলোর সাথে ২% হতে ৩% জিপসাম মিশিয়ে বল মিলে বা টিউব মিলে মিহি পাউডারে পরিণত করা হয়। এ মিহি পাউডারই সিমেন্ট।

২.শুষ্ক পদ্ধতিতে সিমেন্ট তৈরিকরণ: চুনজাতীয় ও কাদাজাতীয় বিভিন্ন কাঁচামাল সঠিক অনুপাতে শুষ্ক অবস্থায় মিশিয়ে ভালভাবে চূর্ণ করে চূর্ণকৃত মিশ্রণ কে ঘুরন্ত চুল্লিতে সিক্ত পদ্ধতির ন্যায় পুড়িয়ে পিণ্ড তৈরি করা হয় এবং শীতল করা পিণ্ডের সাথে জিপসাম সহযোগে পাউডারে বল মিল বা টিউব মিলের সাহায্যে পরিণত করা হয়। এ পাউডারই সিমেন্ট। বালি সম্পর্কে জানুন

সিমেন্ট তৈরিতে সিক্ত পদ্ধতি ও শুষ্ক পদ্ধতির মধ্যে পার্থক্য

সিক্ত পদ্ধতি:-
১.চূর্ণ করা কাঁচাসালের সাথে ৩০% হতে ৫০% পানি মিশিয়ে গ্রাইণ্ডিং মিলে পেষাই করা হয়।
২.পেষাইকৃত সমসত্ত্ব মিশ্রণ কাদার পাতলা কাই এর মতো হয়।
৩.পেষাইকৃত পাতলা কাই স্লারি নামে পরিচিত।
৪.রোটারি চুল্লিতে স্লারি শুকানো, পোড়ানোর কাজ করতে হয়।
৫.জ্বলানি খরচ তুলনামূলক বেশি।

শুষ্ক পদ্ধতি:-
১.চূর্ণকৃত কাঁচামালের মিশ্রণকে তাপ দিয়ে শুকিয়ে গ্রাইন্ডিং মিশে পেষাই করা হয়।
২.পেষাইকৃত মিশ্রণ মিহি পাউডারের মতো হয়।
৩.পেষাইকৃত মিহি পাউডিার র-মিক্স নামে পরিচিত।
৪.রোটারি চুল্লিতে র-মিক্স পোড়ানোর কাজ করতে হয়।
৫.জ্বালানি খরচ তুলনামূলক কম।

সিমেন্টের বিভিন্ন ধর্ম বা ব্যবহার 

১.সিমেন্টের পানি যোজন
২.সিমেন্টের জমাটবদ্ধতা
৩.সিমেন্টের সূক্ষ্মতা
৪.সিমেন্টের নিখুঁততা
৫.সিমেন্টের শক্তি

১.সিমেন্টের পানি যোজন: সিমেন্টের সাথে পানির সকল প্রকার বিক্রিয়াই সিমেন্টের পানি যোজন সিমেন্টের সকল উপাদানিক যৌগগুলো শুষ্ক অবস্থায় থাকে। সিমেন্টে পানির উপস্থিতির সাথে সাথেই এর উপাদানিক যৌগগুলোতে রাসায়নিক বিক্রিয়া আরম্ভ হয়। কিন্তু এদের প্রত্যেকটির পানি যোজনের হার সমান হয়।

২.সিমেন্টের জমাটবদ্ধতা: সিমেন্ট পেস্ট তরল অবস্থা হতে কঠিন অবস্থায় পরিবর্তন হওয়াকে সিমেন্টের জমাটবদ্ধতা বলা হয়। প্রাথমিক জমাটবদ্ধতা ও চূড়ান্ত জমাটবদ্ধতা যথাক্রমে জমাটবদ্ধতার প্রারম্ভ ও সমাপ্তি বুঝায়।

অবাস্তাব জমাটবদ্ধতা: সিমেন্টে পানির উপস্থিতির কয়েক মিনিটের মধ্যেই তাপ উৎপন্ন হওয়া ছাড়াই জমাটবদ্ধতার লক্ষণ পরিলক্ষিত হয়। এ জমাটবদ্ধতাকে অবাস্তব জমাটবদ্ধতা বলা হয়। এ ধরনের জমাটবদ্ধতার পর কোন অতিরিক্ত পানি না মিশিয়ে পুনঃমিশ্রণ করতে সিমেন্টের শক্তির উপর কোনরূপ প্রভাব পড়ে না।

আকস্মিক জমাটবদ্ধতা: ট্রাই-ক্যালসিয়াম অ্যালুমিনেট পানির উপস্থিতিতে প্রচণ্ড বিক্রিয়া সৃষ্টি করে এবং শীঘ্রই সিমেন্টের পৃষ্ঠ কঠিন হওয়া আবম্ভ করে। এ জমাটবদ্ধতাকে আকস্মিক জমাটবদ্ধতা বলা হয়। এ অবস্থা হতে নিরাপদ থাকার জন্য সিমেন্ট ক্লিংকারের সাথে জিপসাম মিশিয়ে সিমেন্ট প্রস্তুত করা হয়।

৩.সিমেন্টের সূক্ষ্ণতা: যেহেতু সিমেন্ট পানির সহযোগে রাসায়নিক বিক্রিয়া করে। কাজেই সিমেন্টের প্রতিটি সূক্ষ্ণ কণার বহিঃপৃষ্ঠে পানির স্পর্শই রাসায়নিক বিক্রিয়া তথা পানি যোজনের কাজ সহজতর করে। এক্ষেত্রে সহজেই বলা যায়, সিমেন্টের সূক্ষ্ণতা যত বেশি হবে পানিযোজিতকরণ তত সহজতর হবে এবং দ্রুত সিমেন্টের শক্তি বৃদ্ধি করবে।

৪.সিমেন্টের নিখুঁততা: সিমেন্ট পেস্ট একবার জমাটবদ্ধ হয়ে গেলে এটার আয়তন বৃদ্ধি পাওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু সিমেন্টের কোন উপাদানিক যৌগের মন্থর পানি যোজনের কারণে অথবা সিমেন্টে মুক্ত লাইম, ম্যাগনেশিয়া এবং ক্যালসিয়াম সালফেট থাকলে আয়তন বৃদ্ধি পাবে, ফলে ফাটল দেখা দিবে।

৫.সিমেন্টের শক্তি: নির্মাণে ব্যবহারের জন্য কাঠিন্যপ্রাপ্ত সিমেন্টের যান্ত্রিক শক্তি সম্পর্কে ধারণা থাকা আবশ্যক। কিন্তু সিমেন্টের শক্তি পরীক্ষার জন্য বিশদ বিবরণ নির্দিষ্ট করে দেয়া আছে। মূলত সিমেন্ট সরাসরি নির্মাণে ব্যবহার করা হয় না বরং এর তৈরি মসলা, কংক্রিটই নির্মাণে ব্যবহার করা হয়। কাজেই কংক্রিট, সমল্লার শক্তিই বিবেচনা করা উচিত। মসল্লা বা কংক্রিটের শক্তি নির্ভর করে- ১.সিমেন্টের সাথে অ্যাগ্রিগেটর সংযুক্তির মাত্রা এবং ২.অ্যাগ্রিগেটের শক্তির উপর।

বাংলাদেশে বিভিন্ন কার্যে সিমেন্টের ব্যবহার

সিমেন্ট

১.যে সকল ভিত্তি পানির স্পর্শে আসে, ঐ সকল ভিত্তি নির্মাণে যেমন জলাধার, পানি অপ্রবেশ্য মেঝে, ডক ইয়ার্ড।
২.গুরুত্বপূর্ণ শক্তিশালী নির্মাণকাজে যেমন ব্রিজ পায়ার, লাইট হাউস,সুউচ্চ টাওয়ার।
৩.নির্মাণের অনাবৃত অংশে যেমন চিমনির চূড়ার অংশ, দেয়ালের কপিং, ব্রিজ ইত্যাদিতে।
৪.সিমেন্টের মসলা, কংক্রিট, রিইনফোর্সড কংক্রিট, রিইনফোর্সড ব্রিকওয়ার্ক, কৃত্রিম পাথর তৈরি।
৫.পানি সরবরাহ ও নিষ্কাশন সংক্রান্ত নির্মাণে।
৬.নির্মাণের বহিঃপৃষ্ঠকে আবহাওয়ার বিরূপত হতে রক্ষার জন্য।
৭.কম পুরুত্বের দেয়ালে প্রয়োজনীয় অতিরিক্ত শক্তি বৃদ্ধির জন্য।
৮.পয়েন্টিং কাজে।
৯.ইমারতের সৌন্দর্যবর্ধনমূলক কাজে।

সিমেন্টের পরীক্ষণ

১.সূক্ষ্ণতা পরীক্ষা
২.জমাটবদ্ধতার সময় পরীক্ষা
৩.খুঁতহীনতা পরীক্ষা
৪.রাসায়নিক গঠন পরীক্ষা
৫.শক্তি পরীক্ষা

১.সূক্ষ্ণতা পরীক্ষা: চালুনি পরীক্ষায় বৃটিশ চালুনির ১৭০ নং চালুনিতে চাললে চালুনিতি অবশিষ্টের পরিমাণ-সাধারণ সিমেন্ট ১০% এবং র‌্যাপিড হার্ডেনিং সিমেন্ট ৫%, তা ছাড়া এয়ার প্যারমিয়াবিলিটি পদ্ধতিতে পৃষ্ঠদেশের ক্ষেত্রফল পরীক্ষায় প্রতি গ্রাম সিমেন্টের কণার পৃষ্ঠতলের ক্ষেত্রফল ২২৫০ বর্গসেমি এবং অগনারের টারবিডি মিটার পদ্ধতিতে ১৬০০ বর্গসেমি এর কম হবে না।

২.জমাটবদ্ধতার সময় পরীক্ষা: জমাটবদ্ধতার সময় পরীক্ষা ও খুঁতহীনতা পরীক্ষার জন্য স্বাভাবিক তারল্যের সিমেন্ট পেস্টের দরকার হয়। কাজেই প্রথমত কোন নমুনা সিমেন্টে কী হারে পানি মিশালে স্বাভাবিক তারল্যের পেস্ট পাওয়া যাবে তা জেনে নিতে হবে। স্বাভাবিক তারল্যের সিমেন্ট পেস্ট নির্ধারণ ও সিমেন্টের জমাটবদ্ধতার সময় নিরূপণের জন্য ভাইকেট যন্ত্র ব্যবহার করা হয়।

৩.খুঁতহীনতা পরীক্ষা: এ পরীক্ষা লি চ্যাটেলিয়ার যন্ত্রের সাহায্যে করা হয়। এটা দু’মুখ খোলা পিতলের তৈরি সিলিন্ডার বিশেষ, যার উচ্চতা ৩০ মিমি এবং ব্যাস ৩০ মিমি।

৪.রাসায়নিক গঠন পরীক্ষা: সিমেন্টের উপাদানগুলো সঠিক অনুপাতে আছে কিনা অথবা সিমেন্টে কোন ভেজাল আছে কিনা, তা জানবার জন্য রাসায়নিক গঠন পরীক্ষা করা হয়। র‌্যাপিড হার্ডেনিং সিমেন্ট ও সাধারণ সিমেন্টের রাসায়নিক গঠন একই রকম। রাসায়নিক বিশ্লেষণে উভয় সিমেন্টের ক্ষেত্রে নিম্নের ফলাফল পাওয়া:-

(ক)ম্যাগনেশিয়া দুই শতাংশের অধিক হবে না।
(খ)দহনজনিত ক্ষয়ের পরিমাণ দুই শতাংশের অধিক হবে না।
(গ)অদ্রাব্য তলানির পরিমাণ ০.৫% এর অধিক হবে না।
(ঘ)সালফার ট্রাই-অক্সাইডে বিদ্যমান মোট সালফারের পরিমাণ ২% এর অধিক হবে না।

৫.শক্তি পরীক্ষা: সিমেন্টের টেনসাইল স্ট্রেংথ ও কম্প্রেসিভ স্ট্রেংথ পরীক্ষার জন্য সিমেন্ট, বালি ও পানির সংমিশ্রণে তৈরি আদর্শ মসল্লার বৃকেট ও ঘনক ব্যবহার করা হয়। বৃকেট ও ঘনক তৈরির জন্য আদর্শ বালির আদর্শ মসল্লা ব্যবহার করা হয়।

আদর্শ বালি: এ বালি উত্তমরূপে পর্যায়িত বিশুদ্ধ প্রাকৃতিক সিলিকা। এগুলো ১৮ নং চালুনিতে চাললে চালুনিতে কোন অবশেষ থাকে না, কিন্তু ২৫ নং চালুনিতে চাললে কম পক্ষে ৯০% চালুনিতে অবশেষ থাকে।
আদর্শ মসলা:- সিমেন্ট ও সম্পূর্ণরূপে শুষ্ক আদর্শ বালি ১:৩ অনুপাতে মিশ্রিত করে পানির সহযোগে এ মসলা তৈরি করা হয়।

কার্যক্ষেত্রে ভালো সিমেন্ট এর বৈশিষ্ট্য গুলো 

১.সিমেন্টের বস্তার ভিতর হাত দিলে ঠান্ডা অনুভূত হবে।
২.একমুষ্টি সিমেন্ট পানিতে ফেললে ডুবে যাবে।
৩.হাতে মিহি পাউডারের মতো অনুভূত হবে।
৪.একমুষ্টি সিমেন্ট হাতে নিয়ে জড়ো করলে জড়ো হয়ে থাকবে।
৫.একখন্ড কাচের পাতের উপর পোর্টল্যান্ড সিমেন্টের শক্ত পেস্ট রেখে পানিতে ২৪ ঘন্টা ডুবিয়ে রাখলে ফাটল সৃষ্টি হবে না, বরং জমাটবদ্ধ হবে।

সিমেন্ট গুদামজাতকরণ

১.সিমেন্ট যতটুকু সম্ভব কম সময়ের জন্য গুদামজাত করতে হবে।
২.বর্ষাকালে সিমেন্ট গুদামজাত করা সমীচীন নয়।
৩.আবহাওয়ারোধী কক্ষে সিমেন্ট গুদামজাত করতে হবে।
৪.সেঁতসেঁতে গুদামে বা মেঝেতে সিমেন্ট গুদামজাত করা যাবে না।
৫.দেওয়ালের গা ঘেঁষে সিমেন্ট গুদামজাত করা যাবে না।
৬.সিমেন্টের বস্তা পাশাপাশি রাখতে হবে এবং তেরপল দিয়ে ঢেকে দিতে হবে যেন বায়ুর মুক্ত প্রবাহ হতে রক্ষা পায়।
৭.সিমেন্টের এক বস্তার উপর এক বস্তা এরূপ ১০ বস্তার অধিক রাখা যাবে না।
৮.শুষ্ক উঁচু প্লাটফর্মের উপর সিমেন্ট রাখতে হবে।
৯.খোলা সিমেন্ট বায়ুরোধী চেম্বারে গুদামজাত করতে হবে।
১০.আগে উৎপাদিত সিমেন্ট আগে ব্যবহার করতে হবে।
১১.সদ্য উৎপাদিত সিমেন্টের তুলনায় সময় অতিক্রান্তে পূর্বে উৎপাদিত সিমেন্টের জমাটবদ্ধতার সময় ও শক্ততা নিচের হারে হ্রাস পায়:

৩ মাস পর কমপক্ষে ২%
৬ মাস পর কমপক্ষে ৫%
১ বছর পর কমপক্ষে ৪০%
২ বছর পর কমপক্ষে ৫০%

শেষ কথা:-তাহলে আমরা বলতে পারি যে, আধুনিক বিশ্বের বিপ্লবের পিছনে সিমেন্টের একটা বড় ভূমিকা রয়েছে। এর প্রসার প্রতিনিয়ন বেড়েই চলেছে। যা আমরা প্রতিনিয়ত আমাদের আশেপাশের নির্মাণকাজে দেখতে পাচ্ছি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here